আমি সৈকত ।গত চার মাস আগের কথা । দিনটা ঠিক মনে নেই ।বর্ষাকাল এর শুরু । তাই তিলোত্তমা জুড়ে ধূসর চাদর বিরাজিত….ওই আর কি । তবে পড়ুয়া মনে সেসময় সেসব কিছুই দাগ কাটে না । বর্ষপূর্তির অন্তিমপর্ব বলে কথা । ফাইনালটা ভালো করে দিতে হবে । রোজকার দৌড়ঝাপে মুষড়ে পড়ছি…প্রায়ই ।কলেজ আর টিউশন দুটোই সামাল দিতে হচ্ছে । বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে নেমে আসে ।যাই হোক , তো এমনই ব্যস্ত চাঞ্চল্যকর দিন । এই সবে বৃষ্টি থেমেছে । বেশ আদ্র পরিস্থিতি । সেদিন আমি কলেজ স্ট্রিটে প্রাকটিক্যাল -এর সমূহ সামগ্রী কেনার ….কিছুটা দাবী নিয়েই পা বাড়িয়েছিলাম । যে ….হ্যাঁ ! আজ যে করেই হোক সব কিনেই বাড়ি ফিরবো ।
সামগ্রী কেনা শেষ । আমি রাস্তার চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে । লাল সিগন্যাল । অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায়ও নেই ।
এমন সময় দূরের কোন থেকে বেরিয়ে এলো এক রমণী । সুন্দর ,স্বাস্থ্যবান , মানে এই বয়সে আমরা যা বুঝি । তো তিনি বই কিনি বেরোচ্ছিলেন এক দোকান থেকেই, হাতে প্লাস্টিকের থলে দেখে তাই বুঝলাম । তার সুশ্রী মুখের দিকে চেয়ে থাকার ফলস্বরূপ আমি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে সমানে উপেক্ষা করেই যাচ্ছিলাম । হঠাৎ , বেশ জোরালো ধাক্কায় হুঁশ ফিরলো । সিগন্যাল সবুজ হয়েছে । আর কি !!
বাড়ি ফিরতে হবে । সমাগম বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্তানুমপাতে তার অস্তিত্ব এর অবলুপ্তির আশ্বাস পেলাম । তাই ওসব আর না ভেবে পায়ে গতি দিলাম । তারপর সোজা বাড়ি ।
তা এত বিস্তৃত বিবরণ এর উপলক্ষ জানাবো অবশ্যই ।
আসলে ব্যাপারটা হলো….এই কিছুদিন হয়েছে আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের টিউশন শুরু । আমি নতুন স্যারের কাছে ভর্তি হয়েছি । সকালে পড়া । প্রথমদিন বেশ ঘুমচোখেই বসে আছি …..এমন সময় সেই রমণীয় সুন্দরীর আবির্ভাব ঘটল ।
আমার দৃষ্টি স্থির । মুখ আদ্ধেকটা খোলা। স্থানাভাবে সে আমার পাশেই আসন গ্রহণ করল ।
“এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন অভাবে….
তার স্পর্শে থাকা নাতিশীতোষ্ণ বায়ুর স্বভাবে ”
দিনের পর দিন কেটেছে । তবে আমি বেশি কিছু উপায় করে উঠতে পারি নি ।শুধুমাত্র নাম জেনেছি । সেটাও স্যারের দয়া । সে দেরি করে আসায় …মৃদু বকুনি মাঝ থেকে সেই নাম উদ্ধার । দিনগুলো রঙের ঠিকানা পেলেও…..সেই গন্তব্যে পৌঁছনোর কোনোপ্রকার উৎসাহ প্রকাশ করছে না ।
তবে এভাবে বেশিদিন চালাতে হয় নি । ওই যে মুখপুস্তিকা ।
জুকুদার সেই অবদানে খুঁজে পেলাম তাকে । ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট তা পাঠিয়ে দিলাম….আগা গোড়া না ভেবে । এমনিতেই অন্য কোনো পথ নেই…..প্রত্যক্ষ কথোপকথনের , তাই পরোক্ষই ভরসা ।সেদিন রাতেই সে একসেপ্ট করে ।
পাক্কা দুদিন পর আমি “hello” পাঠায় ।এরপে শুরু হতে থাকে নতুন গল্পের প্রেক্ষাপট । প্রাথমিকতা হিসেবে আমি রসায়ন সম্বন্ধীয় কথাবার্তায় সীমাবদ্ধ থাকতাম । তবে আলাপের গভীরতা বাড়তে থাকে ।ক্রমশ বন্ধুত্বের সম্পর্কে উপনীত । তবু আমার তো সেই একই অবস্থা । গুমরে মরছি ভেতর থেকে । তবে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম ।তাই নিয়মিত ,ভার্চুয়াল আড্ডা । আর এখন সেই টিউশনেও কথা হয়ে যায় । তাই খুব একটা দুঃখ নেই । অথবা একটি আস্তরণ পড়েছে হয়তো সেই দুঃখে । যাকে ওই ফ্রেন্ডজোন বলা হয়ে থাকে সংজ্ঞানুযায়ী ।
ধীরে ধীরে নিশাচর হয়ে গিয়েছি আমি ।ওই আর কি । এভাবে শীতকাল এলো । আজ তার সাথে ঘুরতে যাবো । ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল । বেশ মনোরম পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে ভালোই লাগে । সে আজকে গোলাপি একটা টপ পড়েছে । নীল জিন্স স্বভাবতই । হালকা সেজেছে সে ।আগে কোনোদিন তাকে সাজতে দেখি নি । খুব ভালো লাগছে দেখতে । সেই সুশ্রী অবয়ব । যা দেখে প্রথমবারের নিম্নচাপে ভিজেছিলো মন । রাস্তা পারাপারের সময়…সে আমার হাত ধরে পার হলো ।
ভালো কেটেছিল সেদিন । আজ এসবই ভেবে চলেছি । কাল আমি একটা বড় পদক্ষেপ নেব ভেবেছি । ফেব্রুয়ারি মাস । প্রেম চতুর্দশী কাল । প্রপোজ করবো তাকে । লাল গোলাপ কিনে এনেছি । টিউশনের শেষে । এদিকে আমার বন্ধুরা কিছুটা জানতে পেরে সমানে পেছনে লাগছে ।
আজ ভোর বেলায় স্নান সেরে একঘন্টা আগেই পৌঁছে গিয়েছি । বসে আছি ।স্যার পড়ানো শুরু করেছেন ।তবে আমার সেদিকে বিশেষ কোনো একটা মনোযোগ নেই ।আমি আরচোখে তাকাচ্ছি মাঝে মাঝে । সেও বেশ আনন্দে আছে মনে হচ্ছে । আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসিতে , প্রস্ফুটিত সেই মুখ ।আজকের দু ঘন্টা বেশ স্থায়ী , শেষ হচ্ছেই না যেন ।
অবশেষে , অন্তিমপর্বের সমাপ্তি হলো । আমি তাড়াতাড়ি বাইরে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম । সে বেরিয়েছে হাসতে হাসতে । আমায় দেখতে পেয়ে জোরকদমে এগিয়ে এলো ।
“কি রে আমি ভাবলাম তুই বাড়ি চলে গেছিস !!”
“না তো । তোর জন্যই wait করছিলাম ।”
“আচ্ছা শোন না তোকে একটা কথা বলার আছে ।”
“হ্যাঁ বল ।”
“আমি প্রেমে পড়েছি ।”
আমার বুকটা ধড়াস করে উঠলো ।
“তোকে বলেছিলাম তো অভির কথা ।সে কাল রাতে আমায় প্রপোজ করেছে । আমি হ্যাঁ বলেছি ।”
আমার ডানহাতে থাকা গোলাপকে আরো শক্ত করে ধরলাম।
বাকিকথাগুলো আমার আর কর্ণগোচর হয়নি । আমি বাড়ি ফিরে এসেছি ।সেই লাল গোলাপ হাতে নিয়ে ।