“আহম্মক” বলতে কিন্তু এখানে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী অথবা শ্রেণীকে বোঝানো হছেনা | “আহম্মক” বলতে আমাদের অর্থাৎ মানবজাতির কথাই বলা হয়েছে |
মানুষ সামাজিক জীব | সমাজের সবকিছু নিয়েই আমাদের চলাফেরা, ওঠাবসা | কিন্তু ক্রমশ এই সামাজিক জীব যেন একটি অসামাজিক জীব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করে চলেছে এই সমাজের বুকে | পায়রার খোপ আর বোকা বাক্সে বন্দী মানুষ এখন যেন আরও একটু বেশি আত্মকেন্দ্রিক, অমানবিক হয়ে উঠেছে | মানুষ আগে খোলা মনে মনের ভাব প্রকাশ করতে জানত, গল্প, হাসি, ঠাট্টা, তামাশা করতে জানত, শিরদাঁড়া সোজা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জানত, সেই আমরাই এখন কেমন যেন বুদ্ধিহীন জড়মানবে পরিনত হয়েছি | এর কারণ হোআটসআপ আর ফেসবুক এ কথা বলার তাগিদ, নাকি কর্মক্ষেত্রে মালিকের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসার লালসা, না শীর্ষে পৌছনোর উচ্ছাকান্খা তা বোঝা মুশকিল | একাধারে দিনের পর দিন আমরা যেমন বিজ্ঞানকে সঙ্গী করে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছি, ঠিক তেমনই অপরের সাথে বা হয়তো নিজের সাথেও অজান্তেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ছি আমরা |
মানুষ যেন আর ঠিক করে ভালোবাসতেও পারে না | ভালবাসাটাও যেন কেমন একটা মেকি পদ্ধতিতে, একটা গা ছাড়া গা ছাড়াশাত। যেন একটা বেসরকারী সংস্থার দুজন চুক্তিবদ্ধ কর্মী | প্রেম-ভালবাসা মানে এখন শুধুই যেন যৌনতা, নেশা আর সেলফির মোড়কে নিজেকে মুড়ে রাখা | মনের ভাব আদানপ্রদান করার জন্যও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির ব্যবহার অতুলনীয়| মন খারাপ হোক বা পেট খারাপ সেটা নিয়ে স্টেটাস দেওয়া বান্ছনীয় | জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবকিছুতেই সেলফি তুলে আপলোড করা আবশ্যক | অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমও এখন এইসব সাইটগুলি | একথা ঠিক যে, এইসব সাইটগুলির মাধ্যমে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌছোনো যায়, কিন্তু পথে নেমে মিছিল করে প্রতিবাদ এ সোচ্চার হয়ে সাধারণ মানুষকে যেভাবে নাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা এই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিগুলির দ্বারা সম্ভব নয় | মানুষের মধ্যে তবে সত্যিই কি মান ও হুশের অভাব দেখা দিল??
ফেসবুক আর টুইটারের এই বর্তমান প্রজন্মতে আত্মকেন্দ্রিকতা একটি মারণব্যাধির মতো সবার মধ্যে ছেয়ে গেছে | মানুষ এখন হোআটসআপ আর ফেসবুক এ অনলাইন হয়ে তাদের আড্ডা, গল্প যাবতীয় সবকিছুই করছেন | এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিই যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী | পাশের মানুষের সাথে যেন একটুও কথা বলার সময়টুকুই এখন আর আমাদের নেই বা হয়তো কোনো অলসতা আমাদের ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলেছে | বিজয়ার শুভেচ্ছা থেকে বিয়ের নিমন্ত্রন সবক্ষেত্রেই আমরা এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির উপর একটু বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি | এটাও সত্যি যে এই সাইটগুলির মাধ্যমে আমাদের সময় ও শ্রম প্রচুর পরিমানে লাঘব হয়, সেইসঙ্গে আমাদের একাকিত্ত্ব আর নিসঙ্গতাও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সমপরিমানে | ক্রমাগত এই মায়াজালে নিজেরা যেন স্বেচ্ছায় জড়িয়ে পড়ছি আমরা | এর থেকে মুক্তি পাওয়া আদৌ সম্ভবপর কিনা সে কথা এখনি বলা সম্ভব নয় | বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষের এই অবনতির চূড়ায় পাড়ি দেওয়া যে ঠিক কোথায় শেষ হবে সে কথা না হয় সময়ই বলুক | পরিবর্তনের হাওয়ায় এই পরিবর্তনটা প্রচণ্ড পরিমানে প্রয়োজন, তবে যদি নিসঙ্গতা- রেষারেষি কাটিয়ে উঠে আগের মতো শিরদাঁড়া সোজা করে দাড়ানো যায় | মানুষের এই বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে শ্রীজাতর চারটি লাইন মনে পরে গেল-
“মানুষ থেকে মানুষ আসে,
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়,
তুমিও মানুষ আমিও মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়”
Content Writing: Aritra Banerjee
Picture Courtesy: authormedia.com, marketwatch.com, psmag.com
Original Copyright © 2014-2015 LaughaLaughi.com. All Rights Reserved
Content Writing: Aritra Banerjee
Picture Courtesy: authormedia.com, marketwatch.com, psmag.com
Original Copyright © 2014-2015 LaughaLaughi.com. All Rights Reserved
Facebook Comments Box