বাংলা ও বাঙালীর খাবার।
প্রথমেই বলে রাখি এই লেখাটি কোনো জাত বা ধর্মকেন্দ্রিক রান্নাকে নিয়ে নয়। এ লেখা অতীতের কোনো দলিল নয়। এ লেখা মানুষের ভেদাভেদ নয়। এ লেখা আসলে হল, বর্তমার যুগে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালীর খাবারের মর্যাদা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে… সেটাকে একবার খতিয়ে দেখা।
বাংলা ও বাঙালীর খাবার নামটা শুনলেই প্রথমে কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার কথা মনে আসে, তবে যুগ পাল্টেছে, লোকজন এখন অনেক বেশি ফিগার সচেতন। তাই কবজির থেকে আধুনিক বাঙালীর মন অল্প পোর্শনেই মন চায়।
আজকালকার রেস্তোঁরা গুলিও বাংলা খাবার সার্ভ করে ঠিক অনেকটা ইংরাজি ঢঙে। একটা সাদা ধবধবে প্লেট তার মাঝখানে সবুজ শাকপাতা অথবা মাংস একটুকরো, মশলা ছাড়া সেদ্ধ সেদ্ধ মত দেখতে খাবার, যেটা আবার বাঙালীরা এমন তৃপ্তির সহিত ভক্ষণ করেন যে মনে সন্দেহ জাগে অতবড় মানুষগুলোর ওইটুকু খাবারে আদেও পেট ভরবে কীনা। তাছাড়া খাবার দেখে মনে হবে এ যেন পেটপাতলা রুগীর পথ্য তৈরী হয়েছে।
এবার আসা যাক বাংলা খাবারের রেসিপিতে। এখনকার আধুনিকারা অবশ্যই রান্নাবান্নার ধাঁর কম ঘেঁষেন ফলতঃ বাঙালীর রান্না, সেই প্রভূত পরিমাণে তেল, মসলা আজ মিসিং। এখন তো কাঁড়িকাঁড়ি ফুড অ্যাপ। কয়েকদিন আগে তো দেখলাম, অনলাইন ফুড অ্যাপে নাকি ঢেঁড়সের তরকারি পাওয়া যাচ্ছে। যা দিনকাল আসছে কোনদিন দেখব দুম করে রান্নাবান্নার ধারা একদম উঠে গেছে হেঁশেল থেকে।
বাংলা খাবার অবশ্যই বর্তমানেও পাওয়া যায়। তবে যা পাবেন তার বেশিরভাগটাই পেশাদারিত্বের কাষ্ঠহাসির মোড়কে মোড়া। আজকাল মাল্টি ক্যুইজিন রেঁস্তোরাগুলো ইন্ডিয়ান খাবার সার্ভ করে। সেখানেও অবশ্য টেষ্ট তেমন কিছু পাবেন না শুধু পেশাদারিত্বের ছোঁয়া। আর সেটাই খেয়ে, প্রচুর পরিমাণে টাকা ব্যয় করে আপামর বাঙালী ভাবে “আহা কী খেলাম জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না”।
যেগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলি হল, সেই পাড়ার দোকানের কচুরি আর এক্সট্রা ঘুগনি চাওয়ার মজাটা। বাংলা খাবার বাঙালীর আবেগের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা না হলে রেঁস্তোরাগুলো এর নাম ভাঁড়িয়ে এত কাঁড়িকাঁড়ি রোজগার করত না। দিনে পরিস্থিতি যা এগোচ্ছে তাতে বেগুনের ভর্তা বা ডিমের ভুর্জি কোনোদিন ইংরাজির নামের মোড়কে সামনে এসে চমকে দেবে। পাত পেড়ে খাওয়া বা কবজি ডুবিয়ে খাওয়া আজকের যুগে আর নেই।