তখন শান্তনু ক্লাস সেভেনে। ইংলিশ টিউশন প্রয়োজন। নিজে স্যার বা ম্যাডাম খোঁজার সাহস আর সামর্থ্য কোনোটাই নেই । বাবা পরিচিত এক স্যার খুঁজে দিলেন । পড়াশোনায় খুব একটা খারাপ ছিল না সে ; মোটামুটি।
তো , সকাল 7 টা থেকে টিউশন । সেজন্য আবার সকাল 5:30 এ মা তুলে দিয়েছে ।অগত্যা যেতেই হলো ঘুম উপেক্ষা করে । তবে , সেই উপেক্ষিত ঘুম তাকে ছেড়ে যায় না , আজও ।
সাইকেলে 7 মিনিট । নতুন টিউশনে প্রথম দিন । অধিকাংশই নতুন মুখ । তবে তাদের মধ্যে স্কুলের এক বন্ধুকে খুঁজে পেল সে। ছোটো শহরে এই এক সুবিধা । এখানে বলে রাখা ভালো, শান্তনু বয়েজ স্কুল থেকে নিঃসৃত । তবে টিউশন সেই লিঙ্গ বৈষম্য রাখে না ।
তো, সেই স্কুলের বন্ধুটার সাথে বসল বেঞ্চিতে । অন্তত, কাউকে সে পেলো, যার সাথে কথাটুকু বলা যাবে । স্যার তখনো আসেননি। রুমে । যে যার মতো গল্প করে যাচ্ছে ।
এমন সময় একটি মেয়ে বেশ চুপচাপ । কেন জানে না , কিন্তু বেশ পছন্দ হলো তার সেই মেয়েটিকে । তখন সেই খুদে মনে ‘ক্রাশ’ এর কন্সেপ্টটায় আসেনি । সাজগোজ তেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ না হলেও , গোছানো । যতদূর মনে পড়ে , নীল টিশার্ট পড়েছিল সেদিনে। ওহ সরি ! টিশার্ট নয় টপ । ওই আর কি , মনে ধরলো বেশ ।
এমন আলস্যে শেষ হলো টিউশন । এরপর আবার শান্তনুর স্কুলের তাড়া । তবে ,স্টুডেন্ট জীবন নতুন দিক এনেছিল সেদিন ।
এভাবে প্রায় দেখা হয় পড়তে গিয়ে । সপ্তাহে দুদিন । তখন দিন রাতের হিসেব খুব সহজ ছিল । সেই দুদিন দেখা হলেই সে খুশি । তবে তার সাথে কথা বলার সাহস পেত না শান্তনু । অজানা কোনো কারণে ।
অন্যান্য সব ছেলেমেয়েদের মধ্যে ‘সে’ই একজন যার সাথে এখনো ঠিকমতো আলাপ হয় নি । বয়েজ স্কুলে পড়ার সাইড এফেক্ট হয়তো ।
সেদিন রাতে প্রথম কবিতা লিখেছিল-
“ইনসমনিয়া নিছকই দোষী,
অব্যক্ত দিন অকারণেই আক্রোশী ।”
শান্তনু প্রথম ভালোলাগা খুঁজে পেয়েছিল । লাভ ক্ষতির হিসেবে তখন ভেবে দেখা হয় না , দিন একটু রঙ মাখলে ক্ষতি কি ।
( চলবে )