“… ভালোবাসা; এক অদ্ভুত অনুভূতি, এক অদ্ভুত শব্দ।
কেউ ভালোবাসা খোঁজে ত্যাগে, কেউ কেড়ে নেওয়ায়, কেউ শরীরে তো কেউ চোখের ভাষায়…
মানবিকতার ভিন্নতায় ভালোবাসাও ভিন্ন আর এটাই এই শব্দের মহিমা।”
– অমিত রায়
(প্রথম বর্ষ, Journalism Department )
কলেজ ম্যাগাজিনে প্রেম ভিত্তিক গল্পের বিভাগে শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে মনোনীত হল অমিতের লেখা। হবে নাই বা কেন, ওর সব লেখাতেই যে ফুটে ওঠে এক চরম সত্য; ওর ‘লাবণ্য’।
…………….
আজও সাড়ে তিনটের মধ্যেই কলেজ থেকে বেরিয়ে শ্যামবাজার মেট্রোর কাছে পৌঁছে গেল অমিত। পাঁচ মিনিট পর বাস থেকে নামলেন লাল শাড়ি পরিহিতা মিস শুভ্রা সেন। ওকে দেখে হালকা হেসে মৃদু স্বরে বললেন,
“শুভ জন্মদিন অমিত! খুব ভাল থাকো আর সব বাঁধন সরিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাও তুমি এই কামনা করি।” —বলেই ব্যাগ থেকে রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ ওর হাতে ধরিয়ে দিলেন তিনি।
‘অমিতের জন্য ‘লাবণ্য’-র তরফ থেকে ‘শেষের কবিতা’ ছাড়া সেরা উপহার আর কী বা হতে পারে!
“আজ আর কোনো বারণ শুনব না লাবণ্য , আমার সাথে কিছুক্ষণ থেকে তারপর তোমার ছুটি। পাশেই একটা ক্যাফে আছে… চলো যাই, তোমার বেশ লাগবে।”
বলেই শুভ্রা সেনের হাতটা ধরে ও এগোতে লাগল, আর মিস সেন নিরুত্তর হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইল।
আগস্ট, ২০১৪:
সেন্ট্রাল এভিনিউয়ের বাস দেখেই থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে মিস সেন-কে অনুসরণ করে বাসে উঠল অমিত। চিঠিটা মিস সেনের হাতে দিয়ে নীচু গলায় বললো ‘উত্তরটা যেন পাই…’
ব্যাস! তারপরের স্টপেজেই নেমে গেল ও।
রাতের বেলা বাংলা বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখছিল অমিত, হঠাৎ ফোনের আলোটা জ্বলে ওঠায় তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে দেখল একটা মেসেজ-
“তিন বছর ধরে এক পাগলামি চলছে অমিত, বড় হয়ে গেছ, আর কতদিন এসব চলবে? সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা সমস্ত ছেলেমানুষি থেকে মন সরিয়ে এবার ভাল করে পড়ো।
বাই দ্য ওয়ে…তোমার মতো এত ভাল করে আমাকে এর আগে কেউ দেখেছে বলে আমার মনে হয় না।”
অল্প হেসে ফোনটা রেখে দিল অমিত…
জুলাই, ২০১৫:
– তোমার তো Commerce এর প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই, তবে সেটা নিয়ে কেন এখানে ভর্তি হলে? অন্য জায়গায় তো অনায়াসে নিজের পছন্দের বিভাগ পেয়ে যেতে!
– কিন্ত সেখানে তো ‘লাবণ্য’ থাকত না, ওকে ছাড়া অমিত বাঁচবে কীভাবে! আজ তোমাকে খুব ভাল লাগছে ‘লাবণ্য’… তোমার আকর্ষণেই যে থেকে গেলাম।
স্কুল লাইব্রেরির বড় জানলার পাশের বেঞ্চে বসেছিল বছর ছত্রিশের মিস শুভ্রা সেন আর একাদশ শ্রেণীর ছাত্র অমিত। এক অদ্ভুত নিথর চাহনি প্রকাশ পাচ্ছে দুজনের চোখের ভাষায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে একে অপরের দিকে বুঝে নিচ্ছে পরস্পরের সকল ব্যাকুলতা।
হঠাৎ ভূগোল শিক্ষিকা মিসেস গুহ এসে পিঠে আলতো টোকা দিয়ে বললেন, “শুভ্রা কখন থেকে তোকে ডাকছি… কী এত ভাবছিস যে শুনতেই পেলিনা। চল Principal Sir ডাকছেন।”
– Sorry গো একদম খেয়াল করিনি, চলো যাই দেখি কী বলেন!
শূন্য মুখে চলে গেলেন শুভ্রা সেন। আর এক অভূতপূর্ব ভালোবাসার প্রথম আস্বাদ পেয়ে তার চলে যাওয়া পথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অমিত।
অষ্টম শ্রেণীর প্রথম দিন থেকেই ভারিক্কি চালের শুভ্রা সেন-কে অসম্ভব আকর্ষণীয় লেগেছিল অমিতের। তাঁর রূপ অন্যান্যদের কাছে কিছুটা হাসির খোরাক হলেও অল্প উঁচু দাঁতের ফাঁকের হাসি অমিতের কাছে তাঁকে রহস্যময়ী করে তুলেছিল। সাহিত্যের উপর বিতৃষ্ণা থেকে সে হয়ে উঠল সাহিত্যপ্রেমী। স্বরচিত কবিতার সংশোধন বা পড়া-বোঝার অছিলায় সে পৌঁছে যেত মিস সেনের কাছে। আর কবিতার নানা পংক্তিতে তাকে প্রকাশ করত অনবদ্য রূপে-
“তোমার মুখের আলগা হাসি আর ওই তিল,
তোমার নিবিড় চোখের শান্ত তারা যেন স্তব্ধ এক ঝিল।”
…এভাবেই কবিতার আদানপ্রদান আর নিশ্চুপ চোখের প্রাণবন্ত ভাষা শুভ্রা সেন আর অমিতকে বেঁধেছিল এক অনন্য সম্পর্কের বাঁধনে।
স্কুলের শেষ দিনে ওরা চোখের জল ফেলেনি বরং হালকা হেসে বলেছিল-
– ভালোবাসার বাঁধনে সঁপেছি আমার সমস্ত মন তোমার পানে, বিশ্বাস রাখি এ দূরত্ব আরও দৃঢ় করবে আমাদের বন্ধন।
– ভরসা করি অমিত ভুলবেনা তার লাবণ্য-কে। আমাদের সম্পর্কের সাক্ষী হয়ে লাইব্রেরি, জানলার ধারের বেঞ্চ, স্কুল গেট সব অমর থাকবে।
……………..
অমিত-লাবণ্য ভরসা রেখেছিল ওদের ভালবাসার। তাই আজও অমিত ছুটে যায় মেট্রো স্টেশনে ওর ভালবাসাকে একবার দেখতে, শুভ্রা সেন বাস স্ট্যান্ডে একাকী অমিতকে দেখার অপেক্ষায় থাকে, সুযোগ খোঁজে অমিত স্কুলে যাওয়ার আর শুভ্রা সেন ওকে ফোন করার। এমনই করেই অমলিন রয়েছে এই ‘অশালীন’ প্রেম কাহিনী; যা ওদের কাছে চরম সত্য।
প্রেম এরকমই… কখনও হাতড়ে যায় শুধুই শরীরী চাহিদা, কখনও এক নিস্পলক চাহনি। ওরা প্রমাণ করেছে শারীরিক সম্পর্ক না রেখেও সমস্ত শরীরের আস্বাদ নেওয়া যায় শুধুমাত্র চোখের ভাষায়। অমিত-লাবণ্য কখনো ছোট হতে দেয়নি তাদের ভালোবাসাকে এই যান্ত্রিক দুনিয়ায় হারিয়ে দিয়ে।
তাই আজ অমিতের জন্মদিনে ওরা ক্যাফের এক কোণে বসে নিঃসংকোচে গাইছে-
“আর কারও পানে চাহিব না আর করিব এ আজ প্রাণপণ,
তুমি যদি বলো এখনই করিব বিষয় বাসনা বিসর্জন।।”
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.