ভালোবাসার অর্থ হয়তো আমরা কেউ জানিনা, সবটাই আপেক্ষিক! ভালোবাসার নানার বর্ণনা, নানান রূপ! বর্তমানের যান্ত্রিকতা থেকে কিছুবছর আগে স্কুলজীবনে আমাদের অনেকেই জীবনেই এসেছে মিষ্টি প্রেমের ঢেউ! তখন ম্যাসেজের শব্দে নয়, ডেটে গিয়ে নয় এক পলকের চাউনিতে কিশোর কিশোরীদের বুকে অকালেই বসন্ত নামত! এই সিনেমায় সেই কিশোর হলো কে রামাচন্দ্র ও কিশোরীটি হলো জানকী যার চুলের বেনুনী, কপালের টিপ আর মায়াভরা মুখশ্রীতে এলোমেলো হয়ে যেতো রামাচন্দ্রের দুনিয়াটি! ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা ছাড়া চোখের ভাষাতেই এদের প্রেম তার গতি নেয়, দামাল নদীর মতো উথালপাতাল করে দেয় ওদের অনুভূতিগুলোকে! মিষ্টি হাসি, কিছুক্ষণের মৌনতা, একসাথে স্কুল ফিরতি দিনগুলোই ওদের পবিত্র সম্পর্কটির সাক্ষ্য বহন করে চলে! তবে এইরকম কৈশোর প্রেমগুলির বেশিরভাগই হয়তো পরিণতি পায় না! এক্ষেত্রেও তাই হয় কিন্তু এদের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা আসলে মিলনে নয়, বিচ্ছেদেই লুকিয়ে ছিলো!
নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে এই দুটি মানুষ আলাদা হয়ে যায়, এদের একজন ওপর মানুষটির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘর বাঁধে অন্যকারোর সাথে ও আরেকজন ত্যাগ আর স্মৃতি আগলে কাটিয়ে দেয় অনেকগুলো বছর! তবে একে ওপরের প্রতি ছিল না কোনো রাগ কিংবা প্রতিহিংসা! বিপরীত মানুষ যাকে কোনো একসময় প্রান দিয়ে ভালোবেসেছিলে, স্বপ্ন বুনেছিলে একসাথে ঘর বাঁধার; সে দূরে চলে গেলেও তার প্রতি ঘৃণা জন্মাবে না তোমার, ক্ষোভ হবে না তোমার; হতেই পারে না! হলে বুঝবে তারসাথে অন্যকিছু, ভালোবাসা নয় তোমার!
এটাও পড়তে পারেন- শান্তনুর ডায়েরি (পর্ব ২)
গল্পের প্রেক্ষাপটে বহুবছর পর রামাচন্দ্রের আর জানকীর আবার দেখা হয় যখন আর একসাথে হওয়া যায় না, ফেরা যায়না! ত্যাগ আর স্মৃতিচারণা এইসবের মধ্যেই একটি রাতের মধ্যেই ওরা কাটিয়ে ফেলে একটা জীবন! কোনোরকম শারীরিক স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ সমান্তরাল দু’টো মানুষ এক হয়ে যায় নিস্পাপ ভালোবাসার বন্ধনে! যেখানে আই লাভ ইউ বলা নেই, একে ওপরের প্রতি ঘৃণা নেই যেটুকু ছিল হয়তো সেই অভিমানটুকুর মাঝেই ওদের স্কুলজীবনের নিঃশব্দ প্রেমটা বেঁচে ছিলো , শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে ওদের মনে আবেগের স্ত্রোতকে চিরস্থায়ী করে রেখেছিল! চিরকাল মিলনে নয়, বিচ্ছেদেও ভালোবাসা পরিপাটি হয়ে পারে, স্বচ্ছ কাঁচের মতো পবিত্র হয়ে পারে এই গল্প তারই প্রমাণ!
তাই এই পৃথিবীর বুকে পূর্ণতা পাওয়া ভালবাসাগুলো যেমন শান্ত নদীর মতো বয়ে চলে, দু’পাশে অনেক অমলতালের গাছ, বসন্তে কৃষ্ণচূড়াও ঝড়ে! তেমনিই পূর্ণতা না পাওয়া ভালবাসাগুলো পাহাড়ী নদীর মতো দামাল, তাদের চারপাশে ক্যাকটাসের গাছ, তবে তাতে যখন ফুল ফোটে তখনও তো সেই সৌন্দর্যে চোখ ফেরানো যায় না! তাই পৃথিবীর সবরকম ভালোবাসার গল্পগুলো বেঁচে থাকুক নিজেকে ভালোরাখার মাঝে, মান-অভিমানের মাঝে, ত্যাগের মাঝে, পাগলামির মাঝে!! কারণ সবকিছুর শেষে ভালোথাকাটাই বাঁচা আর বাঁচার জন্য ভালোবাসাটা দরকার! সিনেমাটি ” তামিল” ভাষার হলেও এর হিন্দি ডাবড ভার্সন অনায়াসেই পেয়ে যাবেন ইউটিউবে! তাহলে আর দেরী কেন, মন ভালো করা এই সিনেমাটি দেখে ফেলুন তাড়াতাড়ি! আশা করছি, মনে দাগ কাটবেই!