মনের স্পর্শ

মনের স্পর্শ বলে কি আসলে কিছু হয়? রবিবার ছুটির দিন, কুহু কফি মগ হাতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে এটাই ভেবে চলেছে ততক্ষণে বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছে, সাথে পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কুহুর পছন্দের একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত; আমার পরাণ যাহা চায়!!

করোনার প্রকোপে বাইরে বেরানো বন্ধ তাই কুহুর কাছে এখন সব দিনই ছুটির দিনের মতো হয়ে গেছে। সারাদিনে কাজ বলতে কলেজের অনলাইন ক্লাস করা আর নিজের কিছু ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে পড়ানো। আজকাল সাধারণত কুহুর বই পড়েই অবসর কাটে, গানও শোনে তবে বই পড়ার বিষয়টা কুহুর কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। আসলে বই পড়ার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারলেই যে অরিন কে ভুলে থাকা যায়!! অরিন সেনগুপ্ত, কলকাতার এক নামকরা কলেজের প্রফেসর। অরিনের সাথে কুহুর পরিচয় প্রায় দুই বছরের, ওদের পরিচয়টা হয়েছিল কলেজস্ট্রিটে বই কিনতে গিয়ে, বইয়ের দোকানদার বই আনতে দেরি করাতে এক কথা দু কথায় ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়, দুজনের মধ্যে ফোন নম্বরও বিনিময় হয় আর তারপর থেকেই শুরু হয় তাদের কথোপকথন। খুব কম দিনের মধ্যেই ওরা দুজন দুজনের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে, কুহু বুঝতে পারে ওদের মধ্যের বন্ধুত্বটা সীমা ছাড়িয়ে অন্য সম্পর্কের রূপ নিচ্ছে কিন্তু এই কথা কুহু অরিন কে বলতেই অরিন কেমন যেন বদলে যেতে থাকল, সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। কুহু অরিনকে অনেক বোঝাতে চাইলেও অরিনের কাছ থেকে ওই বিষয়ক কোনো উত্তরই পেল না তাই বাধ্য হয়েই কুহু সরে এল অরিনের জীবন থেকে।

তারপর কেটে গেছে পাঁচ মাস, ওদের বন্ধুত্বটা যদিও থেকে গেছে ভোলেনি কেউই কাউকে তবুও মাঝে এসেছে এক অপরিসীম দূরত্ব!! কুহুর আজ বারবার অরিন আর ওর কাটানো প্রতিটা ছোট ছোট মুহূর্ত মনে পড়ছে। হঠাৎ কুহুর মনে হল আচ্ছা অরিন তো ওকে পুরোপুরি ভুলে যায়নি এখনও তো ওদের  কথা হয়। আসলে হাত থেকে হাতের স্পর্শটা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই এক নিমেষে সবটাই কেমন বদলে গেল তবুও স্পর্শ বলে যদি কিছু থাকে সেটাই হয়তো মনে রয়ে গেছে ওদের। কিছুদিন আগে কুহুর যা মনে হত পারব না, কখনো সম্ভব না আজ সেইসব কিছুকে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে থাকা। কদিন আগে যেখানে কুহু ভাবতো তার এই অভ্যাস গুলো কি বদলানো সহজ হবে!! আজ সে দেখছে সেই অভ্যাস গুলোই আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। কুহুর মনে হল আমাদের কাল্পনিক মন কখনো কখনো আমাদের কাছের সম্পর্ক গুলোর মধ্যে বাড়িয়ে তোলে মাইল কে মাইল দূরত্ব আবার কখনো এই সম্পর্ক গুলোই এক মুহূর্তে সব দূরত্ব পেরিয়ে চলে আসে আমাদের মনের আরও কাছে।। আসলে কিছু বন্ধুত্ব বা কিছু সম্পর্ক সময় ও দূরত্বের সাথে সাথে মুছে যায় না বরং সবটাই থেকে যায়; তবে তার বাহ্যিক বাহুল্যতা ও প্রকাশতা আগের থেকে কমে যায়..

সমস্ত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যতদিন যাচ্ছে কুহুর উপলব্ধি ক্রমশ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে শুধু এক হাতের সাথে অন্য হাতের স্পর্শ না একটা মনের সাথে অন্য মনের স্পর্শ সবার আগে প্রয়োজন!! হঠাৎ চেনা ফোনের রিংটোনে কুহুর ভাবনায় ছেদ ঘটে, ওর মনে পড়ে এই রিংটোন যে শুধুমাত্র অরিন ফোন করলেই বাজার কথা!!চোখে জল নিয়ে এক দৌড়ে ঘরে যাওয়ার সময় মনে মনে কুহু বলে ওঠে অরিন ফোন করেছে,আমার অরিন..

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *