অটোর জন্য লাইন পড়েছে,
অল্প বৃষ্টি মেখে শহর অপেক্ষারত…
কোনও এক চায়ের দোকানে, রেডিওতে বাজছে কি এক অচেনা মৃদু সুর।
সঙ্গী-দিদির সাথে বাড়ি ফিরতি গল্প…
মাথা ঘুরিয়ে, অটোর জন্য অপেক্ষার অবসান ঘটলো কিনা, দেখতে যাবো;
এমন সময়, চোখ আপনা থেকেই আটকে গেল দূরে সরে যাওয়া খুব চেনা মুখটার দিকে।
দু সেকেন্ডের চোখে চোখ আর তারপর, তার কোনও এক বাহানায় হাতে মুখ লুকোনো, আর সাথে সাথেই আমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া…
তার অতি পছন্দের ‘হঠাৎ দেখা’-র লাইন গুলো যেন কি ছিল?
তোর চোখ যদি মিথ্যে বলতো… ওই দু সেকেন্ড, আড়াল হতো কোথাও?
পাতায় ফুটে ওঠার সাহস, আমার এই কথারা দেখাতো না!
তোর চোখ যদি এক মুহূর্তের জন্য পলক ফেলতো… বুঝতাম আমার একার অন্তরে ঢেউ খেলেছে।
তোর হাত যদি কোনও এক বাহানায় মুখ না লুকাতো…
স্তব্ধ কলম আর ফুরিয়ে যাওয়া ডায়েরীর দ্বন্দ্ব লাগতো, আবার আমার ঘরে।
“রাতের সব তারাই আছে,
দিনের আলোর গভীরে…”
সেদিন যদি, মেট্রো স্টেশনে, বেকায়দায় জুতোটা না ছিঁড়তো?
সেদিন যদি, বাসে উঠতে গেলে জুতোটা খসে পড়ে যাবে, এই ভয়টা না করতো?
সেদিন যদি, অটোর লাইনে এক মিনিটের এদিক-ওদিক হতো?
তাহলে, ওই দু সেকেন্ডের চোখে চোখ আর একই সাথে বাকরুদ্ধ হওয়া, হতো না!
তাহলে, বরাবরের মতো জানতাম, মানুষের হাতেই তাদের ভাগ্যের রেশ।
তাহলে, বরাবরের মতো ধারণা পাল্টাতো না, যে কোথাও কোনো অদৃশ্য কল কাঠি নড়ছে।
প্রশ্ন ওঠে যদি?
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই যে হারিয়ে যায়, তাকে ঘিরে কেন এই উন্মাদনা?
উত্তর রেখেছি সামলেই—
তাকে ঘিরে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত খুব সত্যি,
প্রতিটা আবেগ দারুণ স্বচ্ছ।
“যদি এক মুহূর্তের জন্যেও আমায় চাও সেটাই সত্যি…”
সেই এক দিনের কথা মনে পড়ে?
জামার রঙ ছিল নীল, তোর আমার দুজনেরই!
নীলে নীল মিশে, প্রেম মেখেছিলাম খুব আগলে।
আর আজ? সরে চলে যাওয়ার মুহূর্তে…
জামার রঙ ছিল লাল, তোর আমার দুজনেরই!
লালও আঁকড়ে রাখতে পারলো না মুহূর্তটাকে।
দূরত্ব… দুজনের অস্বাভাবিক ও খুব ক্ষীণ পছন্দের লাল, দাগ টানলো দূরত্বের।
শুধু দু সেকেন্ডের চোখের আশ্বাস, আর অনেক খানি শূন্যতা… পেছনে ফেলে সে এগিয়ে গেল।
আমি তখনও, অপেক্ষারত…
“আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে–
কিছুই কি নেই বাকি?”