অভিশপ্ত হোটেল

“শুভ, দিল্লিতে তোর চাকরি কেমন চলছে? কত বছর পর কলকাতায় ফিরলি।”

“দিল্লিতে থাকার সময় বছর সাতেক এই কফি হাউসের কফি আর ফিসফ্রাই-এর কথা খুব মনে পড়েছে। নিজের শহরে ফিরে অদ্ভুত তৃপ্তি। তিলোত্তমাকে ছেড়ে কোথাও মন বসে না। কিন্তু চাকরি তো আর ছাড়তে পারবো না। অর্ক আর সাম্য তোদের ব্যবসার কী খবর? ফেসবুক আপডেটে তোদের হোটেল উদ্বোধনের ছবি দেখলাম। রমরমিয়ে চলছে তোদের ব্যবসা, কী বলিস তোরা? ”

অর্ক বলে উঠলো, ” ব্যবসা করতে গিয়ে যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে সাম্য আর আমার সেটা মনে পড়লেই এখনো গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কী সাম্য মনে আছে তোর সেই অভিজ্ঞতা? ”

“সে কী আর ভোলা যায়। ”

“তোরা দুজন কী বিষয় কথা বলছিস আমার কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। কেমন অভিজ্ঞতার কথা হচ্ছে শুনি? ”

কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম, ” শুভ, ফোনে কথাগুলো তোকে বলতে পারতাম না, বরং এইটা বলা ভালো আমি বা অর্ক সেই মূহুর্তে তোকে কিছু বলার পরিস্থিতিতে ছিলাম না। আজ যখন তুই জানতে চাইলি তবে শোন।”

সাত বছর আগে তুই যখন চাকরির জন্য দিল্লি চলে গেলি, আমি আর অর্ক যুক্ত বিনিয়োগে একটি ব্যবসা শুরু করবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা দুজনেই ঠিক করলাম একটি পর্যটন কেন্দ্রে হোটেল খুলবো, ফুডিং এবং লজিং এর ব্যবস্থা থাকবে। অর্ক-র চেনা একজন এজেন্ট মিঃ সাধুকা, উনি জমির কেনা-বেঁচা বিষয় বেশ খোঁজ খবর রাখেন। উনি আমাদের জানান দিঘায় সেই সময় কোনো জমি বিক্রি জন্য ফাঁকা নেই। তবে একজন হোটেল বিক্রি করতে চান। আর সেই হোটেলের মালিকের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা মিঃ সাধুকা করে দিয়ে ছিলেন।

শুভ আমাকে থামিয়ে দিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “দিঘায় হোটেলের জন্য জমি খুঁজে, তোরা মায়াপুরে হোটেল বানালি কেনো? ”

অর্ক শুভ কে থামিয়ে বললো, “শুভ, সে অনেক কথা, সবটা সাম্য-র থেকে শোন তাহলেই বুঝতে পারবি। ”

অর্ক-র দিকে একবার দেখে আবার বলতে শুরু করলাম।

ভদ্রলোকের নাম অশোক দাস। মিঃ সাধুকার আমাদের আগেই জানিয়ে ছিলেন অশোকবাবু হোটেলটি বিক্রির জন্য মাত্র চার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছেন। টাকার সংখ্যা এতো কম শুনেই খটকা লেগেছিল আমার। তাও হোটেলের অবস্থান আর হোটেলটি নিজে প্রতক্ষ্য করার স্বাধ ছিল। তবে এতো নুন্যতম মূল্যে হোটেলটি কেনো বিক্রি করছেন সেই কারনটা স্পষ্ট ছিল না আমাদের কাছে। ভদ্রলোক গত এক বছর ধরেই হোটেলটি বিক্রি করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতো কম মুল্যে হোটেলটি এতদিনে বিক্রি হয়নি শুনেই খানিক অবাক হয়ে ছিলাম।

ভদ্রলোকের সাথে ফোনে কথা বলে আমি আর অর্ক রওনা দিয়ে দিলাম দিঘার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেদিন আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘে আচ্ছন্ন তার সাথে অবিরাম ঝিরঝির বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বুঝলাম নিম্নচাপ। সারাদিন আবহাওয়া একই রকম রয়ে গেলো খালি বৃষ্টির মাত্রা কখনো কম আবার কখনো বেশি।

দিঘায় যখন পৌছালাম তখন বিকেল, কিন্তু আবহাওয়া মেঘলা হওয়ায় সময়ের আগে সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির জন্য কোন যানবাহন পেলাম না। একটি বা দুটি রিক্সা কে হোটেলের ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য জিজ্ঞেস করতে তারা যেতে নারাজ হল। বাস থেকে নেমে প্রায় দুই কিলোমিটার হাঁটা পথে হোটেলে পৌঁছালাম।

ঘড়িতে তখন প্রায় সাতটা। হোটেলের চারিপাশ বেশ ফাঁকা, কিছু দূরে ছোটো অতিথিশালা আছে সাইন বোর্ডে দেখে বুঝলাম। হোটেলটির নাম মৈত্রী ফুডিং এন্ড লজিং। সুবিশাল দোতলা হোটেল, শ্বেত পাথরের মেঝে, রিসেপশন বেশ সুন্দর করে সাজানো, ঢুকতেই দেখলাম অশোকবাবু বসে আছেন।

“আপনারা এসে গেছেন। বসুন বসুন, আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”

“তা একটু অসুবিধা হয়েছে আমাদের। বাস থেকে নেমে হাঁটা পথে আসতে হল, এতোটা দূরে কোনো যানবাহন পাই নি। ”

“তা আপনারা কোন হোটেলে থাকছেন? যাওয়ার সময় না হয় আপনাদের সেখানে গাড়ি করে নামিয়ে দেবো। ”

“আমরা কোন হোটেল বুক করি নি। আর এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কোথায় আর যাব, আজ রাতটা এখানেই থেকে যাব, হোটেলটাও ঘুরে দেখা হয়ে যাবে আমাদের। ”

অশোকবাবু আমতা আমতা করে বললেন,

“আআ…আজ্ঞে এখানে থাকবেন মানে? আসলে এখানে কোনো লোক নেই আর আমিও চলে যাবো, আপনারা একা এখানে…. ”

“আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু হোটেলটি এখনও বিক্রি হয়েনি, তাহলে আপনি হোটেলটি এখনো কোনো পর্যটকদের ভাড়া দেননি কেনো? ”

“আসলে বিক্রি যখন হবেই তখন আর ভাড়া দিয়ে কী হবে। আপনারা হোটেলের কাগজপত্র দেখে সই করে দিন তাহলে আজকেই হোটেল আপনাদের হয়ে যাবে। ”

ভদ্রলোক অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করছিলেন যেনো হোটেলটি বিক্রি হলে উনি হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন।

আমি উনাকে বললাম, “আমাদের উকিলবাবু আজ আসেননি, একটি জরুরি কাজে ব্যস্ত, উনি কাল দুপুরে আসবেন। আমরা ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি, উনি আসলেই আমরা আইনি কাগজে সই করবো।

অশোকবাবু হতাশ হয়ে বললেন, ” আজ সই করবেন না? আচ্ছা আপনারা এখানে থাকবেন, কিন্তু এখানে খাওয়া দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আপনাদের আজ রাতটা অন্য কোনো হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কাল সকালে আবার এখানে এসে আইনি কাজ করে নেওয়া যাবে। ”

“না, আমরা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে ব্যবস্থা করে নেব, দোতলায় একটি ঘর খুলে দিন, আজ রাতে এখানেই থাকবো, খুব ক্লান্ত লাগছে আমাদের। ”

রুমে যাওয়ার পর জানালাটা খুলতেই প্রশস্ত সমুদ্র চোখে পড়লো। বর্ষণমুখর দিনে আশপাশ প্রায় জনশূন্য, সমুদ্রের ঢেউ-এর গর্জন বাতাসের সাথে মিশে কানে ভেসে আসছে দূর থেকে।

“লোকেশন কিন্তু বেশ ভালো,আশেপাশে কোনো বড়ো হোটেল নেই, কী বলিস অর্ক? ”

“হ্যাঁ সাম্য, আজ বড়ো ক্লান্ত লাগছে ,তার উপর এই মশার কামড়, উফ্।”

“আচ্ছা বেশ জানালাটা বন্ধ করে দিচ্ছি, একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। তারপর বেড়িয়ে ওই অতিথিশালা থেকে চিলি চিকেন আর চাউমিন নিয়ে এসে খাওয়া যাবে। ”

এই ভেবে দুজনেই বিছানায় এলিয়ে দিলাম ক্লান্ত শরীরটা। হঠাৎ অর্ক চিৎকার করে উঠলো, “বাঁ….চাও………”

অর্ক-র আকস্মিক চিৎকারে থরফর করে উঠলাম, বুঝলাম চোখটা বুজে গিয়েছিল।

“কী হয়েছে অর্ক? ”

“সাম্য, দুটো কালো হাত যেনো এগিয়ে আসছিলো আমার গলার দিকে,অদ্ভুত বিকট হাসি, শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। ”

লাইট জ্বালাতে গিয়ে বুঝলাম লোডশেডিং হয়ে গেছে। ফোনে টর্চ জ্বালালাম।

“অর্ক তুই স্বপ্ন দেখেছিস হয়তো, এখানে কে তোর গলা টিপতে আসবে বলতো, তুই তোর ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে বোস, আমি নিচে গিয়ে দেখি কোন জেনারেটর ব্যবস্থা আছে কিনা। ”

“আমি বোধহয় স্বপ্নই দেখছিলাম সাম্য, তুই যা নিচে থেকে দেখে আয়। ”

রুম থেকে টর্চ নিয়ে বেরোতে চোখের সামনে নীকশ কালো অন্ধকার। সিঁড়ির রেলিং ধরে এক পা এক পা করে নামতে গিয়ে হাতে কিছু তরল জিনিস অনুভব করলাম, থমকে গিয়ে আলোটা হাতে ফেলতে দেখলাম রক্ত, আলোটা সিঁড়িতে পড়তেই দেখলাম থোকা থোকা জমাট রক্ত। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় কিছু ছিল না আর এই মুহূর্তে আমি আর অর্ক ছাড়া আর কেউ নেই তবে এই রক্তের দাগ এখানে। ভাবতে ভাবতে এমন সময় মনে হল কেউ যেন ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আমার, ঘুরে তাকাতেই অনুভব করলাম পাশ দিয়ে এক লহমায়ে কেউ দৌড়ে চলে গেলো সাথে একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেলো আমার শরীর বেয়ে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। কপালে ফোটা ফোটা ঘাম, হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল, শ্বাসরোধ করে এক ছুটে চলে গেলাম রুমে। অর্ক কে হাতটা দেখাতে যাব এমন সময় আলোগুলো সব জ্বলে উঠলো।

“যাক সাম্য আলোটা আসতে একটু স্বস্তি হল। ” আলোতে নিজের হাতটা দেখার পর দেখলাম কোনো রক্তের দাগ নেই। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? হাত তো আমি ধুইনি, তবে দাগটা গেলো কোথায়?

“কিরে,সাম্য কি ভাবছিস তুই, কোথার কোনো উত্তর করলি না যে। ”

অর্ক-র কোথা এড়িয়ে গিয়ে বললাম, “না না বিশেষ কিছু নয়, কী আর ভাববো। চল আমরা বরং রাতের খাবারটা নিয়ে আসি, বৃষ্টি বোধহয় একটু কমেছে এখন। ”

এমন সময় দরজায় কে যেন কড়া নাড়লো। অর্ক দরজাটা খুলতেই দেখলাম একজন ভদ্রলোক, দোহারা চেহারা, তামাটে গায়ের রং, মাথায় কোকড়ানো চুল, বেশ খানিক লম্বা, অদ্ভুত চাউনি যেন অনেক দিন চেনেন আমাদের, হাতে ট্রে নিয়ে দাড়িয়ে ক্ষীণ গলায় বললেন,

“বাবু, আপনাদের রাতের খাবার। ”

“কিন্তু অশোকবাবু যে বললেন হোটেলের রন্ধনশালা বন্ধ, তবে আপনি খাবার নিয়ে এলেন যে। ”

“আপনারা অতিথি এতো রাতে খাবার খুঁজতে কোথায় আর যাবেন—”

ভাবলাম অশোকবাবু খাবারটা পাঠিয়েছেন। ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে দশটা, কোথাও খাবার পাবোনা ভেবে অর্ক উনাকে বললো, “ঠিক আছে যা আছে টেবিলে রেখে দিন, অশোকবাবু কে ধন্যবাদ জানাবেন। ”

খাবারটা রেখে ভদ্রলোক চলে গেলেন।

“সাম্য, খাবারের গন্ধে মো মো করছে, গন্ধে অর্ধেক পেট ভরে গেল।কিন্তু স্বপ্নে আমি এই রকম একজন কেই দেখেছিলাম কালো দুটো হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছিল তবে স্পষ্ট মনে পড়ছে না। ”

“তোর মনের ভুল অর্ক, এই ভদ্রলোক তোর স্বপ্নে কেনো আসবেন? ”

খাবারের ঢাকনা খুলতেই দেখি চাউমিন আর চিলি চিকেন, চমকে উঠলাম আমি আর অর্ক।

“অর্ক এই খাবার আমরা কিনে আনবো বলে ঠিক করে ছিলাম কিন্তু অশোকবাবু জানলেন কীভাবে, এই খাবারগুলো উনি পাঠালেন কীভাবে? ”

তখনই খটকা লাগলো আমার, কিন্তু অর্ক আমায় আশ্বস্ত করে বললো, “সাম্য, আমাদের ভাবার সাথে এই ভদ্রলোকের আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসার কোনো সম্পর্ক নেই। তুই শুধু শুধু চিন্তা করিস না। ”

অর্ক আমায় বোঝালো ঠিকই, কিন্তু ঘটনাটা নিছকই কাকতালীয় একটা মানতে আমার প্রথম দিকে অসুবিধা হলেও অর্ক-র কথা মেনে নিয়ে শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করলাম।

রাতে শুয়ে ঘটনাগুলো ভাবছিলাম আর পর পর সাজালে শিউরে উঠছিলাম আমি। প্রথমে অর্ক-র দেখা স্বপ্ন, লোডশেডিং, আমার দেখা জমাট রক্ত আর আলো আসতেই সেটা দেখতে না পাওয়া তবে কী আমার মনের ভুল। কঙ্কালসার চেহারার ভদ্রলোকের চাউনি বারবার কেনো মনে পড়ছে আর অশোকবাবুর আমাদের ঠিক করা খাবারগুলো পাঠানো – সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিলো আমার। ভাবতে ভাবতে বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘড়িতে তখন ১:৩০টা। খসখস শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল আমাদের দুজনের। বাসনের দুমদাম আর চেয়ার টেবিল সরানোর ক্যাচ-ক্যাচ শব্দ হচ্ছিল। “আওয়াজটা ছাঁদের দিক থেকেই আসছে বলে মনে হচ্ছে অর্ক। কিন্তু এত রাতে ছাঁদে কে থাকতে পারে।তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই এখানে।”

“সাম্য, আমি ছাঁদে দেখে আসছি। ”

এই বলে অর্ক ছাঁদে চলে যায়। তারপরের ঘটনা অর্ক তোকে ভালো বলতে পারবে শুভ।

অর্ক একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো। ছাঁদে গিয়ে দেখি এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর দৃশ্য। যে ভদ্রলোক আমাদের রুমে খাবার দিতে এসে ছিলেন তিনি একটা ডেকচি আর হাতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যেনো খাবার পরিবেশন করছেন অনেক লোককে। কিন্তু ছাঁদে উনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। যে চেয়ার টেবিলের শব্দ পাচ্ছিলাম সেই সব কিছু ছিল না ছাঁদে। উদভ্রান্তের মতো ছাঁদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ে যাচ্ছিলেন তিনি,বিকট ভাবে হাঁসছিলেন কখনো চিৎকার করে কেঁদে বলছিলেন “আমায় মেরো না। ” উনার চোখ দুটো লাল, ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে, ঠোঁটের পাশ দিয়ে জমাট রক্ত বেয়ে পড়ছে , কপাল বেয়ে রক্ত ঝোরে পড়ছে, সব থেকে অদ্ভুত উনার পেটের ভোজালি। উনার রক্তাক্ত শরীর দেখে আমার রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল,আমার শিরদাড়া দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। এক নিশ্বাসে ছুটে ঘরে চলে আসি আর তারপর সাম্য জানে।

হ্যাঁ শুভ, ওই অবস্থায় হাঁপাতে হাঁপাতে অর্ক ঘরে আসতেই অচেতন হয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময় উকিলবাবুর ফোন আসে। উনি ফোনে যা বললেন তা শুনে বিস্মিত হয়ে ছিলাম।

“সাম্যবাবু আপনি যে হোটেলের ঠিকানা আমায় পাঠিয়েছিলেন, সেই হোটেলটি কেনা সম্ভব নয়। হোটেলর ব্যবসা দুজন বন্ধু মিলে শুরু করেছিল। অশোক দাস লজিং-এর ব্যবপার দেখতেন। উনার বন্ধু সুবির সাহা রেঁস্তোরা সামলাতেন। ফুলেফেঁপে উঠেছিল তাদের ব্যবসা। এক বছর আগে সুবির বাবুর আকস্মিক মৃত্যুর পর হোটেলের থেকে মুনাফা কমে যায়।সেই কারনেই অশোকবাবু এই হোটেলটি বিক্রি করার অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু হয় নি। সেই কারণে উনি মূল্য কমিয়ে দিয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি। অভিশপ্ত হোটেল ওটা। অনেকের প্রাণ সংশয় হয়েছে হোটেলটি কিনতে গিয়ে। আর বিলম্ব না করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বেড়িয়ে আসুন ওখান থেকে। রাত্রি যাপন করবেন না দয়া করে। ”

উকিলবাবুর কথা শোনার পর সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে। ঘড়িতে তখন তিনটে। অর্ক-র চোখে মুখে জল দিয়ে চেতনা ফেরাই তারপর রাতারাতি বেড়িয়ে আসি ওখান থেকে।

শুভ সব কিছু শুনে হতবাক। একটু জল খেয়ে বললো, “কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তোদের। ”

হ্যাঁ শুভ এর পরে সাহস করে দিঘায় জমি কিনতে পারিনি, তাই মায়াপুরে ব্যবসা শুরু করলাম আমি আর অর্ক।

সমাপ্ত

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *