চলো ভালোবাসা যাক (অন্তিম পর্ব)

হাসপাতালে পৌঁছে অপর্ণাকে দেখেই মাথা খারাপ হয়ে গেল সুমনাদেবীর। এই মেয়েটার জন্যই আজ এতকিছু! “তুমি এখানে কি করছো? আমার মেয়ের জীবনটা শেষ না করে ছাড়বেনা তাইনা? চলো আমার সাথে…” অপর্ণার হাত ধরে টানতে টানতে তাকে বাইরে নিয়ে এলেন সুমনাদেবী । “আরে সুমনা কি করছো? ওকে ছেড়ে দাও। ওই তো আমার সাথে যোগাযোগ করে মনীষাকে নিয়ে এলো এখানে। তুমি আমার সাথে এসো।” অভীরুপের ডাকে হুঁশ ফিরল সুমনাদেবীর। “মনীষা কেমন আছে? কোথায় এখন? অভিরূপ বলো আমাকে প্লিজ, আমি যে…” হাত তুলে সুমনাদেবীকে থামালেন অভীরূপ। নিজের কেবিনে এনে বসালেন। “মাথায় এবং কোমরে চোট লেগেছে। কোমরের চোট নিয়ে অসুবিধে নেই, ও সেরে যাবে। কিন্তু মাথার ক্ষত থেকে অনেক ব্লিডিং হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রক্ত জোগাড় করতে হবে। আমি আমার পরিচিত সব জায়গায় বলেছি। কিন্তু মুশকিল হলো মনীষার ব্লাড গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। খুব রেয়ার। কিন্তু তুমি চিন্তা কোরো না। একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

চুপচাপ বসে অভীরূপের কথাগুলো শুনছিলেন সুমনাদেবী। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ল রিতমের কথা। রিতমের ব্লাড গ্রুপ তো ‘ও নেগেটিভ’! কালই তো রিতমের মা বলেছিলেন ফোনে। “আমি এক্ষুনি আসছি”, বলে ছুটে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে রিতমকে ফোন করে সুমনাদেবী।

– হ্যালো রিতম, মনীষার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে! মাথায় লেগেছে। এক্ষুনি ওকে রক্ত দিতে হবে। তোমার আর মনীষার ব্লাডগ্রুপ তো এক। তুমি চলে আসো, আমি হাসপাতালের ঠিকানাটা দিয়ে দিচ্ছি।

– কী! অ্যাকসিডেন্ট! রক্ত দিতে হবে! ইয়়ে আমার এসবে খুব ভয়! আমি পারব না আন্টি, আপনি অন্য কাউকে বলুন।

মাথায় বাজ পড়লো সুমনাদেবীর। এসব কি বলছে ও! পারবেনা মানে!

– তুমি এসব কি বলছ বাবা! আর ক’দিন বাদে তোমাদের বিয়ে আর তুমি এখন…”

– বিয়ে! আগে আপনার মেয়ে সেরে তো উঠুক! শুনলাম তো মাথায় চোট। কে জানে পরে আদৌ কেমন থাকবে। আমি এসবে নেই আণ্টি, রাখছি।

ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন সুমনাদেবী। এ কোন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলেন তিনি! তবে কেন কোথাও ভুল হলো?

“কাকিমা?” চমকে পেছনে তাকান সুমনাদেবী । “আমার ব্লাড গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। আমি রক্ত দিতেই এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। তুমি আমার কোনো কথা না শুনেই… যাই হোক চিন্তা করো না, মনীষার কিছু হবে না। আমি রক্ত দিয়ে আসছি।”

নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুমনাদেবী। মনের মধ্যে ঝড় চলছে। এই ঝড় তাকেই থামাতে হবে।

 

একটা নতুন ক্যাফের উদ্বোধনে এসেছেন সুমনাদেবী। সেই ঘটনার পর কেটে গেছে তিনটে মাস। একটি ঘটনা তাঁর মনের সব জট যেন খুলে দিয়েছে। অপর্ণা তার পরে দিনরাত সেবা করে মনীষাকে সুস্থ করে তুলেছে।সুমনাদেবী বুঝতে পেরেছেন যে মনীষার জন্যে অপর্ণার থেকে ভালো সঙ্গী কেউ হবে না। তাই তাদের সম্পর্কের পথে তিনি আর বাধা দেননি। আজ তাদের স্বপ্নের ক্যাফের উদ্বোধনে তিনি এসেছেন।

“আন্টি, এই নাও, ফিতেটা কাটো।” “আমি! আমি কাটবো! কিন্তু…” “কোনো কিন্তু না মা”, মনীষা এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। “তুমি যদি সেদিন তোমার গয়না বন্ধক দিয়ে আমাদের পাশে না দাঁড়াতে আজ আমাদের এই স্বপ্নটাই পূরণ হতো না। শুধু তাই নয়, ক্যাফে তৈরির সময়তেও সব মূহুর্তে তুমি আমাদের সাপোর্ট করেছ মা, তাই আজ তোমার চাইতে যোগ্য এই কাজের জন্য কেউ নেই।”

আনন্দে চোখে জল চলে এলো সুমনাদেবীর। মন থেকে আশীর্বাদ করলেন দুজনকে। এই ভালোবাসার শহরে ওদের ভালোবাসাটাও বেঁচে থাকুক। সত্যি, ভালোবাসা কোনো নিয়ম মেনে হয় না।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *