॥তিলোত্তমা কলকাতার রূপকথা॥
আঁকা বাঁকা অলি গলি;
শহরটা যেন চোরাবালি,
ইট-কাঠ পলেস্তারা;
জন কোলাহলে জাগে সাড়া;
আলোর শহর তিলোত্তমা…
কি! তিলোত্তমা শুনে ঘাবড়াচ্ছেন নাকি? না, না!
কোনো মানবীর রূপের বর্ণনা দিচ্ছিনা। মানব-মানবীতে ঠাসা ইট-কাঠ-পাথরে আগাগোড়া সাজানো আমার শহর তিলোত্তমারূপী কলকাতা।
বিশাল শহর, মস্ত বাড়ি;
মানুষ আছে ভুঁড়ি ভুঁড়ি,
পাহাড় প্রমাণ অট্টালিকা;
নয়তো এ যে মরীচিকা।।
কর্মঠ মানুষের নিষেধবিহীন যাতায়াত আর বাস্তবতার কঠিন দেওয়ালে মোড়া কলকাতা যেন এক সচল যন্ত্র। তবে এ যন্ত্রের গতিবিধি মাপা দায়! কিন্তু বদ্ধ শাসনের আবডালে যেমন মায়ের মমতা মাখা করুণ ছোঁয়া থাকে ঠিক তেমনি কলকাতা কিন্তু রূপ-সৌন্দর্যের আঙ্গিকে পরিপূর্ণ যথার্থই তিলোত্তমা।
ব্রিটিশ গাঁথার পাতায় পাতায়;
মোদের শহর কলিকাতা॥
নগরীর বক্ষে বিশাল মাপের চৌরাস্তায় যানবাহনের কালো ধোঁয়া যখন বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে নগরীর আর এক প্রান্তে গঙ্গার স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া প্রাণের কিঞ্চিৎ শান্তি অবশ্যই আনে। গোধূলির লালচে আবেশ মাখা ব্যস্ত শহরে সূর্য অস্ত নিতেই আলোর রোশনাইয়ে তিলোত্তমা নিজেকে সাজিয়ে তোলে।
আলোর শহর তিলোত্তমা;
স্মৃতি হাজার রয়েছে জমা…
প্রেমের শহর-ভালোবাসার শহর কলকাতা। ব্যস্ততা এখানে আপেক্ষিক, আনন্দ নয়। হাজার তারার রোশনাইয়ে মাখা রাতের মায়াবী আলো মুছে যেতেই পাখির কলতানে জেগে ওঠে কলকাতা। বোবা ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো নিভতে থাকে আর ভোরের আকাশ জেগে ওঠে নতুন উদ্যমে।
কফির পেয়ালায় তুফান ছুটে;
কফি হাউস জেগে ওঠে॥
নস্টালজিয়া এখানকার চিরসঙ্গী। কফি হাউসের নবীন-প্রবীণের আড্ডা কিংবা ময়দান অথবা নন্দন চত্বরে শুধুমাত্র এই নস্টালজিয়ার টানেই বহু মানুষ ছুটে আসেন॥
ভিক্টোরিয়া, শহীদ মিনার;
ডাকছে শহর, খুলে দুয়ার॥
তবে আভিজাত্য এবং বনেদিয়ানা বজায় রাখার সিংহভাগ আজও বজায় করে চলেছে উত্তর কলকাতা। এখানকার সাবেকি আমলের বাড়ি, ট্রাম, হাতে টানা রিকশা সব মিলিয়ে কোথায় যেন আস্ত কলকাতা শহরের গন্ধটা অনুভব করা যায়॥
অপরদিকে দক্ষিণ কলকাতা বজায় রেখেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। নিত্যনতুন সাজে কলকাতাকে সাজিয়ে তুলেছে। পার্কস্ট্রীট অঞ্চল এবং রাজারহাট-নিউটাউন সংলগ্ন এলাকা বিলাসিতার মাপকাঠিকে চরম মাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে।
এ যে রূপনগরীর রূপের গাঁথা…
তিলোত্তমা কলিকাতা॥
সব মিলিয়ে নতুন-পুরোনোর রঙে-ঢং-এ এবং সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতার আভিজাত্য মেশানো স্মৃতিবিধুর কলকাতা আমাদের প্রাণের শহর তিলোত্তমা।