মনমরা

– কীরে মনমরা করে বসে আছিস? ( পিছন থেকে অত্রিকা বলে উঠল)

– কী করব বল ( সৌম্যর গলা একটু ভারী)

– কী ব্যাপার? কিছু হয়েছে বাড়িতে?

– বাড়ি? হ্যাঁ ঠিক ওটা বাড়িই বটে আমার। জানিস আভার বাড়ি ওরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।

– ( চমকে গিয়ে) মানে? কী বলছিস? কবে হল? এসব কী বলছিস?

– কেন জানিস না? পুলওয়ামার ঘটনাটা তো কাল সারাক্ষণ টিভিতে দেখাচ্ছিল।

– ( স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে) ওহ পুলওয়ামার ঘটনাটা?

– এত নিশ্চিন্ত কী করে হচ্ছিস তুই? কী করে? চল্লিশটারও বেশি মানুষ মারা গেছে অত্রিকা!

– মানুষ যতদিন না নিজেরা নিজেদের ইগো আর দ্বন্দ্ব ভুলে এগিয়ে আসছে ততদিন কিছু মিটবে না।

– তা বলে আর কত বলি? সেই তো স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই চলছে। আর কেন? এ রক্তের হোলি কবে বন্ধ হবে?

– শোন জঙ্গিরা হচ্ছে রক্তপিপাসু বাঘের মত। একবার যখন রক্তের স্বাদ পেয়েছে তখন সহজে ছাড়বে না।

– আচ্ছা এমনটা হয় না? যে সবটা ভুলে ওরা আমরার এই বিভেদটা মিটে যাক?

– বোকার মত কথা বলিস না। যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন রাজ্য আর রাজনীতি থাকবে। আর রাজনীতির নাগপাশে জড়ানো সমস্যার সমাধান হয় না।

– কী দরকার বলতো? কী দরকার? আর কত বার এই ভাবে সইব আমরা?

– সইতে কে চায় বলতো? তবুও সইতে হবে।

– কিন্তু আমি আর সইব না। ( একটু থেমে) আমি ঠিক করেছি আর্মির পরীক্ষাটা দেব।

– ( বিস্ময়ে) মানে?

– হ্যাঁ। ( মাথা নীচু করে সৌম্য জবাব দেয়) সৈন্যদের এই হত্যা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। কাল রাত থেকে ঘুমোতে পারিনি।

– তা বলে হঠাৎ করে? ! আমার কী হবে?

– ( একটু চুপ করে) আমি তোকে খুব ভালোবাসি তবে আমার দেশের আজ আমাকে প্রয়োজন। আমি চাইলেই শান্তির চাকরি করতে পারি। কিন্তু…

– কিন্তু কী? ( চোখ ছলছল করে তার)

– এত বছর নিশ্চিন্ত জীবন কাটিয়েছি, এ তো সৈন্যদের ঋণ আমার উপর। এবার তাদের রক্ত আমি শোধ করব।

– আচ্ছা যা ভালো বুঝিস কর।

– অত্রি…

– হুম

– আমার পাশে থাকবি তো?

– কী করে তুই তো আমার পাশ ছেড়ে অনেক দূরে যাচ্ছিস।

– না রে পাগলি, তোর কাছেই আছি। তোর মনের ভেতর, চোখ বুজলেই আমাকে দেখতে পাবি তুই।

অত্রিকার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে সৌম্য একটু হাসে। তাদের ভালোবাসা সবার অলক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করে ভবিষ্যতের বদলার জন্য।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *