শীতের সকাল ও একটি আদুরে প্রেম – এই সম্পর্ক চিরকালের অমলিন। আসলে শীতের ওই ভেজা ভেজা আবহাওয়া মনের মধ্যে কিছু না কিছু ঠিক জাগিয়ে তোলে, হতে পারে প্রেম বা বিরহ কিংবা কারোর স্মৃতি।
(এক)
রচনা ঘুম থেকে উঠেই মনে মনে ভেবে নিল সে কিছুতেই অখিলের সাথে আজ পড়তে যাবে না। কাল রাতে সামান্য একটা ঝামেলার জন্য অখিল খুব উল্টোপাল্টা কথা শুনিয়েছে তাকে, তাই রচনার বড় অভিমান হয়েছে। ব্যাগের পাশে কমলালেবুটা রাখা ছিল, রচনা একবার সেটাকে দেখে হাতে নিল। কমলালেবু অখিলের খুব প্রিয়, কাল ফোনে সে বলেছিল নিয়ে যেতে কিন্তু ঝামেলার পর আর ইচ্ছা করছে না।
সমস্যাটা হল, কাল রাতে রচনা ফোনটা রেখে শোয়ার ঘরে গেছিল তারপর ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। অখিল প্রায় দশবার ফোন করেছে তাকে সঙ্গে পনেরোটা এসএমএস। রচনার মা তাকে খাবার সময় ডেকে তোলে, খাবার পর পড়ার ঘরের লাইট বন্ধ করতে গিয়ে ফোনটার দিকে নজর দিতেই রচনার ঘুমের নেশা কেটে যায়। তারপর ফোন করতেই ঝামেলা শুরু।
রচনা একটু দোনোমোনো করে কমলালেবুটা ব্যাগে ঢোকায়।
(দুই )
শীতের সকাল এমনিতেই ঠান্ডা তারপর আজ আবার কুয়াশা পড়েছে। ঘর থেকে বেরোতেই রচনার মনে হল কে যেন এক কুঁচি বরফ তার মুখের দিকে ছুঁড়ে মারল। টুপি মাথায় দিলে কী রকম বদ্ধ বদ্ধ মনে হয় তাই সে টুপিটা টানতে গিয়েও টানল না, অখিল আবার দেখলে বকবে কথাটা মনে আসতেই সে মাথায় টুপিটা পরে নিল।
তার বাড়ি থেকে বাসস্ট্যান্ড মিনিট দশেকের হাঁটা পথ, তারপর বাস ধরে কালীঘাটের কাছে পড়তে যাওয়া। সকাল সকাল প্রতি রবিবার উঠতে বিরক্ত লাগলেও একবার ঘুম ভেঙে বাইরে বেরোলেই মন ভালো হয়ে যায় তার। এই নিশ্চুপ রাস্তা, কুয়াশার আস্তরণে ঘিরে থাকা রাস্তাঘাট তার মাঝে ভোরের কাঁপুনি দেওয়া ঠান্ডা হাওয়া সবটাই রচনার ভালোলাগে।
বাসস্ট্যান্ডে এসে অন্য সময়ে অখিল কে সে দেখতে পায় আজ দেখে বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা। তাহলে কী সে চলে গেল আজ তাকে ফেলে? কথাটা মনে হতেই আবার খারাপ লাগে রচনার। ফর্টি ওয়ান বাস এসে গেছে, সকালের বাস মোটামুটি ফাঁকাই থাকে, রচনা চারপাশ একবার দেখে বাসে উঠে পড়ে।
বাসের একদম পিছনের দিকের জানালার ধারের সিট টা তার আর অখিলের প্রিয়। রচনা গিয়ে তাতেই বসল। সামান্য ঝামেলার জন্য অখিল যে আসবে না পড়তে এটা ভেবে খারাপ লাগছে তার।
বাসটা একটু চলা শুরু করতেই হঠাৎ অখিল হাঁপাতে হাঁপাতে এসে উঠল।
(তিন )
অখিল বাসে উঠে চারপাশে তাকাতে তাকাতে তারপর রচনার পাশে এসে বসে পড়ে। মনে মনে খুশি হলেও রচনা তাকে কিছু বলে না শুধু মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে।
অখিল হাসতে হাসতে বলে,
” কী রে এখনও রাগ করে আছিস?”
” না”
” হ্যাঁ রাগ এখনও আছে। কালকের জন্য সরি, আসলে তোকে অতবার ফোনে না পেয়ে ভয় লাগছিল”
” তারপর?” একটু অভিমানী স্বরে বলে রচনা।
” তারপর আর কী, এটা আনতে লেট্ হল” বলে সে পকেট থেকে এক বোতল খেঁজুর রস বার করে,
রচনা আর হাসি চাপতে পারে না, সে হো হো করে হেসে বলে,
” ও মা খেঁজুর রস?! এত মিষ্টি গিফট্ সকাল সকাল! তাহলে তো দেখছি রোজ ঝামেলা করতে হবে।”
“এই মোটেও না কিন্তু” বলে রচনার গাল আলতো করে টিপে দেয় সে।