সেতু

কিংশুক কোনোরকমে লাঞ্চ শেষ করে সাইকেলটা প্রাণপণে ছোটাতে লাগল। তার সাইকেল ভাগানো যেন আজ রাজধানী এক্সপ্রেস্ কেও হার মানাবে।

১ টা ৩৫ বেজে গেছে। ১ টা ৩০ এ কলেজের জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওর রোজকার রুটিন।

বাড়িতে প্র‍্যাকটিকেলের বাহানা দিয়ে রোজ এই সময়ে বেরিয়ে আসে সে। ঐশ্বর্যাকে একটিবার দুচোখ ভরে দেখার আশায়।

ঐশ্বর্যার ক্লাস শেষ হয় ১টা ৩০ এ কিংবা তার মিনিট দশেক পরে।

ঐশ্বর্যা আর কিংশুক থার্ড ইয়ারে পড়ছে। প্রথমজন জিওগ্রাফিতে, দ্বিতীয়জন ফিজিক্স এ। কিংশুকের পুরোটা জুড়ে ‘ও’ ই আছে বলা যায়।

ঐশ্বর্যা কিংশুককে তেমন পাত্তা দেয় না। প্রোপোজ করার সময়ই ওদের মধ‍্যে প্রথম কথার বিনিময় হয়েছিল, হয়তো বা ওটাই শেষ বাক‍্য বিনিময়।

হবেই না বা কেন! কিংশুক যা লাজুক, ঠিক করে কথাই বলতে পারে না মেয়েদের সাথে। কথা বলার সময় মনে হয় কোনো ভাইরাস আক্রান্ত ব‍্যাক্তি কথা বলছে।

কিংশুক কলেজ পৌঁছাল পৌনে দুটোতে। এই শীতেও সে দাবদাহ গ্রীষ্মের মতো ঘামছে।

সাইকেল স্ট‍্যান্ডে সাইকেল রেখে সে ছুটে স্পাইডারম‍্যান স্পিডে সোজা গিয়ে দাঁড়াল ঐশ্বর্যার ক্লাসরুমের বাইরে।

গিয়ে দেখল ঐশ্বর্যার ক্লাস তখনো চলছে। কিছুটা স্বস্তি পেল সে। তখনও কেউ আসেনি।

‘ম‍্যাথ্ ও জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের মেলবন্ধন করেছে ১০ মিটার লম্বা এই একটা সেতু।

 

ওটা অন‍্য কারো কাছে জাস্ট একটা ব্রিজ হলেও কিংশুকের কাছে আবেগ। কত স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে প্রতিটা ইটে।

একে একে কিংশুকের সব সাঙ্গপাঙ্গ ভিড় জমাতে শুরু করল। নিজেদের মধ‍্যে হাসি, ঠাট্টা , গল্প গুজব চলছে। এমন সময় ঐশ্বর্যা বেরিয়ে এল ক্লাসরুম থেকে।

কিংশুকের হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগল। চোখ তুলে ওর দিকে চাইতেও পারছে না সে। এতো বন্ধুর সামনে লজ্জায় ভ‍্যাবাচেকা খেয়ে গেছে।

একটা আজব ঘটনা ঘটল। ঐশ্বর্যাই কিংশুকের পথ কেটে এগিয়ে গেল ।চোখের চাহনিতে ডাকল তাকে। আবার ফিরে চলে গেল। কিংশুক ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের গুজব শুনে যাচ্ছে, কিস‍্যু করতে পারল না।

এদিকে প্র‍্যাকটিকেল শুরু হয়ে গেল। কিংশুকের মন পড়ে থাকলো ওই সেতুতে। যেন সে হারিয়ে ফেললো ঐশ্বর্যাকে।

এতটা ভয় তার কোনদিনই করেনি। যাকে সে পেলোই না তাকে আবার হারাবার কি ভয়! চারিদিকটা কেমন যেন শুন‍্য হয়ে গেল। বুক কাঁপতে লাগলো কিংশুকের।

কলেজের শেষ দিনটা যেন অপূরণীয় থেকে গেলে কিংশুকের। ‘আর কি কোনদিনই দেখা হবে না দুজনের’ একথা ভাবতে ভাবতে ছবির ফ্রেমে বন্দি হলো ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট।

একপাশে মিথ‍্যে হেসে মেনে নিলো কিংশুকের মুখ। বন্দি হলো কলেজের স্মৃতির খাতায়।

ওটাই ওদের শেষ দেখা। প্রেমটা তাদের অসমাপ্ত হয়েই রয়ে গেল!

সেতুটা যেন হঠাৎই তাৎপর্যতা হারিয়ে ফেলল। সেতু মিলন ঘটালেও এক্ষেত্রে অজান্তেই যেন বিচ্ছেদ পড়লো দুজনের!

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *