প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের সম্মুখীন সর্বাধিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি। গত সপ্তাহে এক বিজ্ঞানী বৈজ্ঞানিক রিপোর্টে লিখেছেন যে আমাদের যা ধারণা ছিল তার থেকে Great Pacific Garbage Patch ওজন ছিল ৪ থেকে ১৬ গুণ বেশি।
প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে এবং পোশাক, সঞ্চয়স্থান, পরিবহন, প্যাকেজিং, নির্মাণ এবং ভোগ্যপণ্যের একটি বৃহৎ অংশে ব্যবহৃত হয়।
ভারত প্রতি বছর ৬২ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন করে, যার মধ্যে মাত্র ৪৩ মিলিয়ন টন সংগ্রহ করা হয়। শুধুমাত্র ১২ মিলিয়ন টনের সঠিক ভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয় এবং বাকিগুলি ডাম্পড হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৪৩৬ মিলিয়ন টন নাগাদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের কথায় জাতীয় রাসায়নিক ল্যাবরেটরি জানায় যে, ২০১৫-১৬ সালে ভারতে প্রায় ৯০০,০০০ টন PET(Polyethylene Terephthalate) উৎপাদন করা হয় – নরম পানীয়ের বোতল, আসবাবপত্র, গালিচা, প্যানেলিং ইত্যাদি তৈরির জন্য। ইউনিয়ন পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের মতে, প্রতিবছর ভারতে প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়।ভারতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশাল সমস্যা রয়েছে। ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দিল্লি ৬৮৯.৫২ টন প্লাস্টিকের বর্জ্যের শীর্ষে রয়েছে, এছাড়াও চেন্নাই (429.39 টন), মুম্বাই (408.২7 টন), ব্যাঙ্গালুুুরু (313.87 টন) এবং হায়দ্রাবাদ (199.33 টন) প্লাস্টিকের বর্জ্যের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।
“United Nations Environment” এর প্রধান এরিক সোলহেম বিশ্বাস করেন যে, “Beat Plastic Pollution”-এ একমাত্র ভারতই পারে নিজের এই দূষণ ঘাটাতে।
এই সব প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং প্লাস্টিকের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার আগের তুলনায় আরো গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা ছিল এবং এই সমস্যার সমাধানে ভারতের মাদুরাইয়ে Thiagarajar College of Engineering এর অধ্যাপক Rajagopalan Vasudevan পুনর্ব্যবহৃত কাঁটাযুক্ত নমনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী প্লাস্টিকের বর্জ্যকে রূপান্তর করার একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন যার ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনাশ সম্ভব।
প্লাস্টিক যেহেতু অ-বিয়োজ্য তাই প্লাস্টিকের সাধারন রূপান্তর সম্ভব নয়। তাই তিনি প্লাস্টিকগুলিকে মিহি ভাবে কাটে এবং সেই গুলিকে ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত পাথরকুচির সাথে মেশায়।এরপর এর সাথে আলকাতরা মেশান হয়। অত্যাধিক তাপে প্লাস্টিক পুড়ে যায় এবং পাথরগুলোর গায়ে আবরণ হিসেবে লেগে যায়। এরপর এ গুলিকে ঠান্ডা করা হয়, পরবর্তীকালে এই পাথর কুচিগুলি রাস্তা মেরামতের কাজে ব্যবহার করা হয়। এর সুবিধা এই যে প্লাস্টিকগুলি পুড়ে গিয়ে এক শক্ত বন্ধনীতে পরিণত হয়, যা আলকাতরা ও পাথর কুচিগুলির মধ্যে শক্ত বন্ধন স্থাপন করে। যার ফলে একটি রাস্তার সহনক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তিনি যে প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেছেন তা এখনও পর্যন্ত ভারতের হাজার হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে প্রেরণ করা হয়েছে, যার ফলে পরিবেশ থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
তার এই আবিস্কারের জন্য তিনি পদ্মশ্রী উপাধি পান।