আবার দেখা।

(এক)

“আবার দেখা, তোমার সাথে। কী জানি কী বলব” কথাগুলো কতকটা নিজের মনেই  গুনগুন করে উঠল অঙ্কিতা।

আজ বুধবার, ঠিক ছ’মাস পর তার তমালের সাথে দেখা। আজ বিকেল পাঁচটার সময় কলেজ স্কোয়ারে দেখা করার কথা। অঙ্কিতা অবশ্য দুপুরে খেয়ে নিয়েই ভাবতে শুরু করেছে সে কী পরবে, কী বলবে এইসব। পাঁচটা জামা চেঞ্জ করার পর সে উঠে আয়নার সামনে আসে, একটু মুখভঙ্গি করে।  মনের অলীক সংলাপ গুলো বাস্তবের আয়নাতে প্রয়োগ করার রাস্তা  খোঁজে,

-কী রে কেমন আছিস?

-ভালোই তো। তুই? অনেক রোগা হয়ে গেছিস যে…

-হ্যাঁ, আসলে তোর মত খেতে আর কেউ জোর করে না, তাই ইচ্ছেটা চলে গেছে।

-ইচ্ছাটা কিন্তু আমার যায়নি।

-মানে? কীসের?

-(একটু থেমে) ছ’মাসের পুরানো খোলসটা ছেড়ে আরেকবার নতুনভাবে হাত ধরলে কেমন হয়?

-উমম্ গাধা ছাগল, এই কথাটা বলতে এত দেরি করলি?!

-আরে এই সুযোগে কেমন রোগা হয়ে গেলাম দেখ, এটাই তো প্ল্যান ছিল। তুই যা সুন্দরী তাই নিজেকে আরেকটু হ্যান্ডসাম করে নিলাম।

-ছাগল।

নীল রংটা ভীষন প্রিয় তমালের, হাতে একটা নীল রঙের  শাড়ি নিয়ে অঙ্কিতা মুচকি হেসে ফেলে।

                           (দুই)

দুপুরে ঘুম না হলে তমালের হয় না আবার, কিন্তু আজকের উৎকণ্ঠাতে তার ঘুম উবে গেছে। দুপুরে খাওয়া টাও ভালো করে হয়নি। এই শীতে সকালে একবার চান করা সত্ত্বেও দুপুরে আবার সে চান করল। আয়নাতে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে সে কী যেন ভাবে,

-ওই বলছি, তুই এখন আর বাইরের খাবার খাস না তো?

– না ওই অভ্যাস টা গেছে।

– তবু ভালো, নইলে পেটের ঝক্কি তো সেই আমা… মানে কাকিমাকে পোহাতে হত

-মায়ের বয়স হয়েছে তাই মা পারবে না, তুই নিবি আমার ঝক্কি?  

-রাজী তবে …

– তবে কী?

– আমাকে ওসব সোনা, মানা, কুচু, পুচু বলে ডাকলে হবে না।

– ওকে সোনা।

– আবার?! তুই না ছাগল

আয়নার দিকে তাকিয়ে তমালের হঠাৎ খেয়াল হল অঙ্কিতার ক্লিন শেভড্ পছন্দ সে তাড়াতাড়ি রেজার নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।

(  তিন )

জীবনে প্রথমবার তমাল ঠিক সময়ে এল, অঙ্কিতা খুশি হল বটে তবে সেটা বাইরে দেখাল না। হাসি মুখে বলে,

” কী রে কেমন আছিস?”

তমাল একটু লজ্জা লজ্জা মুখে বলে,

” ভালো। তুই?”

” ভালো।”

এরপর দুজনে কী বলবে ভেবে পায়না। শেষমেশ অঙ্কিতাই বলল,

” চল না, ওই পুকুরের ধারে ওখানে বসি”

” হ্যাঁ, চল”

শীতের শেষ বিকেলের আলোতে পাশাপাশি তারা হাঁটতে শুরু করে। দুজনের মনের মধ্যে এত কথা জমানো তাই হয়তো মুখে সেগুলোর প্রকাশ হচ্ছে না, ওদের নীরবতাই নতুন ভোরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ভোর ওদের সমস্ত কালিমা মুছে নতুন দিনের সূচনা করবে।  মুখে ব্যক্ত না হয় নাইবা হল,মনের যোগাযোগ টা যেন অটুট থাকে ওদের।

 

 

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *