ও মশাই, আপনি কী নারী স্বাধীনতা তে বিশ্বাস করেন?

ও মশাই, আপনি কী নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন? আরে 2019 এ এটা খুব খাচ্ছে লোকে। এটা যদিও খাওয়ার বা খাওয়াবার বিষয় নয় তাও লোক খাচ্ছে।

আসলে স্বাধীনতা স্বাধীনতাই, তার না থাকে জাত, না থাকে ধর্ম, না থাকে দেশ। স্বাধীনতা হল নিজেকে সঠিক পথে বিকশিত করা। প্রতিটা রাষ্ট্রের কর্তব্য মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া। যার জন্য আমাদের ভারতীয় সংবিধানে স্বাধীনতা সংরক্ষণের অনেকগুলো ধারা, উপধারা রয়েছে।

প্রাচীনকাল থেকে নারীদের স্বাধীনতা একটু বিতর্কের বিষয়। একদিকে যেমন মহিয়সী একদল মহিলা যুগে যুগে নিজেদের কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন। তেমনই আরেকদিকে মহিলাদের ঘরে আটকে রাখার প্রবণতা বেড়েছে।

তবে আজ সময় পাল্টেছে, নজর পাল্টেছে। কিন্তু ঠিক কতটা? ঠিক কতটা পালাবদল হল? সেটাই আজকে বলব একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে।

হাওড়া থেকে ব্লু-হলুদ বাসগুলোর বসার সিটের একটা অংশ পুরো মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। অপর দিকটাতে “Senior Citizen”, “Handicapped” এও প্রায় ভর্তি। অর্থাৎ সাধারণ মানের সুস্থ সবল একটা ছেলের বসার জায়গার পরিমাণ অত্যন্ত নগন্য। অনেক সময়ই এমন হয়েছে ( বলা চলে বেশিরভাগ সময়ই) ভিড়ে ঠাসাঠাসিতেও পুরুষ যাত্রীটি ফাঁকা “Ladies” সিটে বসার সাহস পায়নি। কারণ?  হয়তো সামনের কোনো স্টপেজে কোনো মহিলা বাসে উঠলে তাকে উঠে পড়তে হবে।

আমরা বড্ড বেশি নারী স্বাধীনতার কথা বলি।  আচ্ছা এখানে নারী স্বাধীনতা কই? শিক্ষাক্ষেত্রে হোক বা কর্মক্ষেত্রে আমরা সমান অধিকার চাই নারীদের জন্য। তাহলে বসার সিটের জন্য এই অনিয়ম কেন?

যে বাসে আগে উঠবে, যে যেখানে সিট পাবে, সেটা তার অধিকার। মহিলা বলে অতিরিক্ত সুবিধা পাব কেন? এই অতিরিক্ত সুবিধা সাম্যতার পথে অন্যতম বাধা। নিজের চোখের সামনেই দেখতে পাই। ভীড় বাসে বহুক্ষণ দাঁড়িয়েও একটা ছেলে বসার জায়গা পায় না কিন্তু একটা মেয়ে ঠিক পায়…. কী করে?  ওই যে মহিলা হবার দৌলতে।

একটা পুরুষ যাত্রীকে নিজের সিট থেকে তুলে ইয়ং মহিলারা কী যে মজা পান, জানি না। আরও বিশ্রী ব্যাপার হচ্ছে, ধরুন কোনো ছেলে লেডিজ সিটে বসে আছেন। অনেক মেয়ে আছে যারা অন্যান্য লেডিজ সিট ফাঁকা থাকলেও সেই পুরুষটিকে উঠিয়ে দিয়েই সেখানেই বসেন। কী আনন্দ পান বলবেন?

অনেকে প্রশ্ন তুলবেন তাহলে লোকাল ট্রেনে সংরক্ষিত কামরার কী দরকার? দরকার আছে বইকী। বাসের তুলনায় অনেকটা বেশি দূর যায় ট্রেন তাই ভীড়টাও বেশি এখানে। তাছাড়া লক্ষ্য করলে বুঝবেন জেনারেল কামরা ট্রেনে বেশি থাকে তাই এখানে বৈষম্যটা ঠিক চোখ পড়ে না।

একটা কথা ভেবে দেখুন তো। লেডিজ সিটে বসা পুরুষগুলোকে কী ভাবে মহিলারা সিট থেকে উঠিয়ে দেয়! আচ্ছা সেই মহিলা গুলো যখন ছুটতে ছুটতে কোনো জেনারেল কামরাতে উঠলে পুরুষ যাত্রীগুলো তাকে ধরে নামিয়ে দিলে?

এবার বলি সবক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকে। বলা ভালো হাওড়ার শুধু এই ব্লু-হলুদ বাসেই এরকম সংরক্ষিত সিট ( এত বৃহৎ পরিসরে) দেখা যায়। তাছাড়া অনেক মহিলাকে দেখেছি বয়স্ক পুরুষ যাত্রীটিকে না তুলে দিতে।

তবে ব্যতিক্রম দিয়ে দুনিয়া চলে না। নারীরা সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দাবী করে তাহলে এক্ষেত্রে নয় কেন?

‘যোগ্যতমের উদবর্তন’ ডারউইনের মতবাদটাই তো সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। যে যোগ্যতার নিরিখে শ্রেষ্ঠ হবে তারই তো উচিত সঠিক অধিকার দাবী করা। মুখে নারীবাদী মোর্চার কথা বললে কোনো লাভই হবে না। যতদিন এই অসম বিষয়টি নারীরা নিজেদের ভিতর থেকে বার করতে পারছেন না বা মহিলা হবার সুযোগ আদায় করা বন্ধ করছেন না।ততদিন নারীদের সঠিক অর্থ অগ্রগতি হবে না।

আমি বলছি না তে ধর্মঘট, অনশন হোক। সেটা মোটেই কাম্য নয়। তবু আমাদের রোজকার জীবনে আমরা কিছুটা অভ্যাস বদলাতে পারি, যা আমাদের ভালো করবে। আর দেখবেন একদিন এই দুনিয়াও বদলে গেছে, ভালোর জন্য।

আপনি বলবেন এ অতি তুচ্ছ বিষয় কিন্তু আমি বলব না। এ মোটেই তুচ্ছ নয় কারণ যতক্ষণ নারীরা নিজেদের সমান অধিকার কার্যক্ষেত্রে প্রকাশ করছেন না, ততক্ষণ শুধু ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করলে কিছু পাল্টাবে না।

” ভাবো ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস কর”

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *